প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন ও মেধাবী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা গুলো কী?

আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে তা হলো 
কোটা ব্যবস্থা:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ নারী কোটা, এর সাথে আছে ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, পোষ্য কোটা ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন এই কোটার বেড়াজাল ডিঙিয়ে একজন মেধাবী ছাত্রের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া আর এভারেস্ট জয় করা সমান কথা।

প্রাথমিক শিক্ষকের পদমর্যাদা ও বেতন স্কেলঃ
প্রাথমিক শিক্ষকের পদমর্যাদা একবারে নিচের দিকে। সম্ভবত পিওনের দুই ধাপ আগে আর বেতনও পর্যাপ্ত নয়। একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের এন্ট্রিলেভেলের বেতন স্কেল ৪৯০০ টাকা এখন এই বেতন স্কেলে কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দরখাস্তই করার কথা নয়। আরও মজার ব্যাপার হলো বর্তমানে প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে দপ্তরী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং এন্ট্রি লেভেলে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চেয়ে পিওনের বেতন বেশি!!!!!!!!!! বর্তমানে আবার পুল শিক্ষক নামে কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেয়া আছে যাদের বেতন বা সম্মানী যাই বলেন না কেন তা হল রোজ ২০০/- (দুই শত টাকা) করে। তাও আবার কাবিটা পদ্ধতিতে। তাতে একজন পুল শিক্ষক সারা মাস কাজ করলে পান বড়জোর ৫০০০/- (পাচঁ হাজার টাকা) -র মত। অপরদিকে দপ্তরী কাম প্রহরী পান প্রায় ১৫০০০/- (পনের হাজার টাকা) -র টাকার মত।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি-প্রশ্নফাঁসঃ
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হলো একটি অন্যতম বিষয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সকল পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকে (যদিও বর্তমানে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়ে থাকে)। এর সাথে আছে অবৈধ টাকার লেনদেন। ঘুষ এবং ক্ষমতাসীন দলের লোকদের প্রাধান্য দেয়া হয়। এর ফলে দেখা যাচ্ছে যে, এতসব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে খুব বেশি মেধাবীরা এই পেশায় আসতে পারছে না।
এখন যে প্রশ্নটি সবার সামনে চলে আসে সেটি হলো কিভাবে প্রকৃত মেধাবী এবং আগ্রহীদেরকে শিক্ষকতায় আনা যাবে? আমার মতে সবার আগে যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো নিয়োগ প্রক্রিয়ার সংস্কার, কোটা পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন  কারণ অন্যান্য ক্ষেত্রে মেধার হেরফের হলে খুব বেশি সমস্যা হয়না কিন্তু শিক্ষকতার ক্ষেত্রে এর সুদূর প্রসারী প্রভাব লক্ষ করা যায় এবং এজন্য কয়েক প্রজন্মকে ভূগতে হয়। শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে যাতে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে না হয়। প্রাইভেট টিউশনি আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে। ভালো বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা গেলে তখন শিক্ষকরা আর প্রাইভেটের দিকে ঝুঁকবেন না। ভারতে শিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামো প্রণয়ন করে প্রাইভেট টিউশনি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর সাথে শিক্ষকদের নন-মনিটারী এ্যাওয়ার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে যেমন- প্রতিবছর শিক্ষক সম্মেলন, সব স্তরে শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পুরস্কার, যে সকল প্রতিষ্ঠান ভালো ফলাফল করবে তাদেরকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি আরো জোড়দার করতে হবে। এভাবে আমরা যদি শিক্ষকতা পেশাকে নতুন প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি তাহলে মেধাবী শিক্ষকদের পদচারণায় মুখরিত হবে আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলো। নীতি, নৈতিকতা, আদর্শ আর মূল্যবোধ নিয়ে প্রিয় শিক্ষকের আলোয় আলোকিত হবে আগামী প্রজন্ম।

No comments:

Post a Comment